রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে করণীয়

ছবি সংগৃহীত

 

সামিয়া তাসনিম:  শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে  প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা সুষম হতে হবে-

১. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার রাখুন। সুষম খাবার হলো সব ধরনের খাদ্য উপাদান সঠিকভাবে উপস্থিত থাকবে। আপনার শরীরের ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী ক্যালরি ঠিক করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। খাবারে অবশ্যই শর্করা (ভাত, রুটি, ব্রেড, নুডলস, আলু ইত্যাদি), আমিষ (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি), ফ্যাট (যে কোনো তেল, দুধ, মাংস ইত্যাদি), সবজি (সবুজ, হলুদ শাক সবজি) ও ফল রাখতে হবে।

 

২. প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন সি ক্ষতিকর জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে এপিথিলিয়াল প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দৃঢ় করে। এমনকি অণুজীবের ধ্বংস হারও বাড়িয়ে দেয়। যেমন পেয়ারা, আমলকী, কমলা, জাম্বুরা, সজনে পাতা, শাক, লেবু, কাঁচামরিচ ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যাবে।

 

৩. প্রতিদিন রোদে (সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩ টা) ১৫-৩০ মিনিট বসতে হবে। এতে আপনার শরীর সূর্যের আলো নিয়ে কার্যকরী ভিটামিন ডি তৈরি করবে। যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। অনেক সময় অনেকের শরীরে এই কার্যকরী ভিটামিন ডি খুব কম থাকে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্টারি খেতে পারেন। মনে রাখবেন সূর্যের আলো ব্যতীত ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে কার্যকর হবে না। মাছের তেল, ডিম ইত্যাদি ভিটামিন ডি থাকে।

 

৪. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। খাবারের মধ্যে পানি না খেয়ে খাওয়ার আগে এবং পরে খাবেন। সকালে খালি পেটে পানি খেতে পারেন।

 

৫. প্রোবায়োটিক্স খেতে হবে প্রতিদিন। অনেকেই এর নাম হয়তো জানেন না। এটি একটি ভালো ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের শরীরে খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলোকে রিমুভ করতে সাহায্য করে। খাবারের মধ্যে দইয়ে প্রোবায়োটিক্স পাওয়া যায়। এছাড়াও সাপ্লিমেন্টারি হিসেবেও খেতে পারেন।

 

৬. ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার বা ভালো ফ্যাট যা কডলিভার তেল, অলিভ তেল, সামুদ্রিক মাছ বা মাছের তেল, বাদাম ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়, সেগুলো প্রতিদিন খেতে হবে। এতে ভিটামিন এ, ডি পাওয়া যায়।

 

৭. জিংকসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে আমরা জিংক বেশি পেয়ে থাকি। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় প্রোটিন (মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, ডিম, মিষ্টিকুমড়া বিচি ইত্যাদি) বেশি করে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যারা কিডনি রোগী তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

 

৮. প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। সেটা যে কোনোভাবে হতে পারে। ব্যায়াম বা বাসার কাজ করে।

 

৯. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমের প্রয়োজন। রাতে ভালো ঘুম দিতে হবে।

 

১০. অবশ্যই আমাদের মানসিক স্বস্তি থাকতে হবে। যে কোনো রকমের দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। সব সময় মনকে হাসি-খুশি রাখতে হবে।

 

১১. আমাদের দেশের যে কোনো ধরনের মসলা জাতীয় খাবার যেমন, আদা, রসুন, লবঙ্গ, সিড (সরিষা, গোল মরিচের গুঁড়ো, চিয়া সিডস ইত্যাদি) কালোজিরা ইত্যাদি প্রতিদিন একটু একটু করে খাওয়া।

১২. গ্রিন টি খাবেন দিনে ২ বার করে।

১৩. হাত পরিষ্কার করবেন স্যানিটাইজার দিয়ে। আর মনে রাখতে হবে এই খাদ্যাভ্যাসগুলো প্রতিদিন মেনে চলতে হবে। একদিন মানলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হবে না। করোনা প্রতিরোধের জন্য এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপরের খাবারগুলো প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তাই এ সময় অবহেলা না করে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাড়াতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

লেখক : পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড, গুলশান, ঢাকা।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মধুর ক্যান্টিনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রদল প্যানেল

» কর্মীদের সুরক্ষায় গার্ডিয়ানের সাথে ব্যাংক এশিয়ার পার্টনারশিপ

» দেশজুড়ে ওয়ালটন প্লাজায় বিশেষ ছাড় উপভোগ করবেন বাংলালিংকের অরেঞ্জ ক্লাবের সদস্যরা

» সিলেটে জীবনরক্ষাকারী যক্ষ্মা চিকিৎসায় আইসিডিডিআর,বি-এর পাশে দাঁড়ালো প্রাইম ব্যাংক

» উদ্ভাবনী আইটি সেবা নিয়ে টেক্সটেকে অংশ নিচ্ছে এক্সেনটেক

» চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে সর্বদলীয় বিক্ষোভ, বুধ-বৃহ্স্পতিবার হরতালের ডাক

» জামালপুরে মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

» দেশের সর্বপ্রথম ডিজিটাল এসএমই লোন ‘সাফল্য’ নিয়ে এলো ব্র্যাক ব্যাংক

» উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চলছে ডাকসু নির্বাচন : ডিসি মাসুদ

» ভোট কেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা করছে ছাত্রদল: শিবির সেক্রেটারি

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে করণীয়

ছবি সংগৃহীত

 

সামিয়া তাসনিম:  শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে  প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা সুষম হতে হবে-

১. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার রাখুন। সুষম খাবার হলো সব ধরনের খাদ্য উপাদান সঠিকভাবে উপস্থিত থাকবে। আপনার শরীরের ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী ক্যালরি ঠিক করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। খাবারে অবশ্যই শর্করা (ভাত, রুটি, ব্রেড, নুডলস, আলু ইত্যাদি), আমিষ (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি), ফ্যাট (যে কোনো তেল, দুধ, মাংস ইত্যাদি), সবজি (সবুজ, হলুদ শাক সবজি) ও ফল রাখতে হবে।

 

২. প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন সি ক্ষতিকর জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে এপিথিলিয়াল প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দৃঢ় করে। এমনকি অণুজীবের ধ্বংস হারও বাড়িয়ে দেয়। যেমন পেয়ারা, আমলকী, কমলা, জাম্বুরা, সজনে পাতা, শাক, লেবু, কাঁচামরিচ ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যাবে।

 

৩. প্রতিদিন রোদে (সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩ টা) ১৫-৩০ মিনিট বসতে হবে। এতে আপনার শরীর সূর্যের আলো নিয়ে কার্যকরী ভিটামিন ডি তৈরি করবে। যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। অনেক সময় অনেকের শরীরে এই কার্যকরী ভিটামিন ডি খুব কম থাকে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্টারি খেতে পারেন। মনে রাখবেন সূর্যের আলো ব্যতীত ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে কার্যকর হবে না। মাছের তেল, ডিম ইত্যাদি ভিটামিন ডি থাকে।

 

৪. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। খাবারের মধ্যে পানি না খেয়ে খাওয়ার আগে এবং পরে খাবেন। সকালে খালি পেটে পানি খেতে পারেন।

 

৫. প্রোবায়োটিক্স খেতে হবে প্রতিদিন। অনেকেই এর নাম হয়তো জানেন না। এটি একটি ভালো ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের শরীরে খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলোকে রিমুভ করতে সাহায্য করে। খাবারের মধ্যে দইয়ে প্রোবায়োটিক্স পাওয়া যায়। এছাড়াও সাপ্লিমেন্টারি হিসেবেও খেতে পারেন।

 

৬. ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার বা ভালো ফ্যাট যা কডলিভার তেল, অলিভ তেল, সামুদ্রিক মাছ বা মাছের তেল, বাদাম ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়, সেগুলো প্রতিদিন খেতে হবে। এতে ভিটামিন এ, ডি পাওয়া যায়।

 

৭. জিংকসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে আমরা জিংক বেশি পেয়ে থাকি। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় প্রোটিন (মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, ডিম, মিষ্টিকুমড়া বিচি ইত্যাদি) বেশি করে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যারা কিডনি রোগী তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

 

৮. প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। সেটা যে কোনোভাবে হতে পারে। ব্যায়াম বা বাসার কাজ করে।

 

৯. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমের প্রয়োজন। রাতে ভালো ঘুম দিতে হবে।

 

১০. অবশ্যই আমাদের মানসিক স্বস্তি থাকতে হবে। যে কোনো রকমের দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। সব সময় মনকে হাসি-খুশি রাখতে হবে।

 

১১. আমাদের দেশের যে কোনো ধরনের মসলা জাতীয় খাবার যেমন, আদা, রসুন, লবঙ্গ, সিড (সরিষা, গোল মরিচের গুঁড়ো, চিয়া সিডস ইত্যাদি) কালোজিরা ইত্যাদি প্রতিদিন একটু একটু করে খাওয়া।

১২. গ্রিন টি খাবেন দিনে ২ বার করে।

১৩. হাত পরিষ্কার করবেন স্যানিটাইজার দিয়ে। আর মনে রাখতে হবে এই খাদ্যাভ্যাসগুলো প্রতিদিন মেনে চলতে হবে। একদিন মানলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হবে না। করোনা প্রতিরোধের জন্য এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপরের খাবারগুলো প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তাই এ সময় অবহেলা না করে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাড়াতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

লেখক : পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড, গুলশান, ঢাকা।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com